বৃহস্পতিবার, ০৯ মে ২০২৪, ১১:৩৪ পূর্বাহ্ন

গ্রেপ্তার-রিমান্ডে জ্বলছে তিতাস

গ্রেপ্তার-রিমান্ডে জ্বলছে তিতাস

স্বদেশ ডেস্ক:

নারায়ণগঞ্জের তল্লায় মসজিদে ভয়াবহ বিস্ফোরণ ও অগ্নিকা-ে হতাহতের জেরে তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের চার প্রকৌশলীসহ আট কর্মকর্তা-কর্মচারীকে সিআইডির গ্রেপ্তার ও তাদের রিমান্ড প্রদান কেন্দ্র করে ফুঁসছে গ্যাস সরবরাহকারী এ প্রতিষ্ঠানটি। সিবিএ তো বটেই, তিতাসের সাধারণ কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও আন্দোলনে নামছেন- এমন খবরে গতকাল রবিবার সকালে প্রতিষ্ঠানটিতে ছুটে যান জ্বালানি বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. আনিসুর রহমান এবং পেট্রোবাংলা চেয়ারম্যান এবিএম আবদুল ফাত্তাহ। একই দিন জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদের সঙ্গে সচিবালয়ে দেখা করেছেন তিতাসের সিবিএ নেতারা। তারা গ্রেপ্তারকৃতদের সম্পূর্ণ নির্দোষ দাবি করে তাদের মুক্তির জন্য তিন দিন সময় বেঁধে দিয়েছেন বলে সূত্রের খবর। সূত্রমতে, প্রতিমন্ত্রী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন বলে নেতাদের আশ্বাসও দিয়েছেন।

এরও আগে তিতাসের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ঘোষণা দেন গতকাল বিকালে মানববন্ধন কর্মসূচির। সকাল থেকে তিতাসের প্রধান কার্যালয়ের তিন তলায় এমডির দপ্তরের বিভিন্ন অফিস থেকে প্রকৌশলীরা এসে জড়ো হতে থাকেন। সিবিএ নেতৃবৃন্দরাও সেখানে গিয়ে জড়ো হন। সিনিয়র সচিব ও পেট্রোবাংলা চেয়ারম্যান তিতাস গ্যাসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে বৈঠক করে গ্রেপ্তারকৃতদের জামিনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দেন। এর পর পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হয়।

এদিকে গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের ছাড়াতে আন্দোলনে নামতে তিতাসের প্রকৌশলীদের আহ্বান জানিয়েছে প্রকৌশলীদের জাতীয় মোর্চা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন, বাংলাদেশ (আইইবি)।

অন্যদিকে এ আন্দোলনকে পুঁজি করে তিতাসের বর্তমান এমডিকে অপসারণের মিশনে নেমেছে কোম্পানির এক প্রভাবশালী মহাব্যবস্থাপক (জিএম)- এমন অভিযোগ পাওয়া গেছে একাধিক দায়িত্বশীল কর্মকর্তার কাছ থেকে। সূত্রগুলো বলছে, সিবিএর কয়েকজন নেতা ও প্রকৌশলীকে ওই জিএম ফোন করে বলেছেন- বর্তমান এমডির কারণেই তিতাসের কর্মকর্তারা গ্রেপ্তার হয়েছে। ফলে তীব্র আন্দোলন গড়ে তুলে বর্তমান এমডিকে অপসারণ করতে হবে।

তিতাসের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, জ্বালানি সচিব বৈঠকে জানিয়েছেন গ্রেপ্তার প্রত্যেকের জামিনের চেষ্টা করা হচ্ছে। সোমবার (আজ) নাগাদ গ্রেপ্তার সবার জামিন হয়ে যাবে বলে তিনি আশ্বাস দিয়েছেন। তবে আইনগত জটিলতার কারণে এ বিষয়টি নিষ্পত্তিতে সময় প্রয়োজন হবে।

তিতাস সূত্র বলছে, বিকাল ৫টায় পূর্ব নির্ধারিত মানববন্ধনের জন্য কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ভবনের সামনে নামলেও শেষ পর্যন্ত আর মানববন্ধনটি হয়নি। যেহেতু প্রতিমন্ত্রী এবং জ্বালানি সচিব গ্রেপ্তারকৃতদের জামিনে প্রয়োজনীয় আশ্বাস দিয়েছেন ফলে তারা আর মানব বন্ধন করেনি।

জানতে চাইলে তিতাস সিবিএ সভাপতি মো. কাজিম উদ্দিন আমাদের সময়কে বলেন, আমরা প্রতিমন্ত্রীকে বলেছি- আমাদের কর্মীরা সম্পূর্ণ নির্দোষ, তাদের কাছে কেউ কোনো সময়ই পাইপলাইন লিকেজের বিষয়ে জানায়নি। প্রতিমন্ত্রী আমাদের বলেছেন তারা নির্দোষ হলে তাদের অবশ্যই জামিন হবে।

জ্বালানি বিভাগ সূত্র বলছে, নারায়ণগঞ্জের ঘটনায় তিতাস কর্মকর্তা-কর্মচারীদের গ্রেপ্তারের বিষয়টি বিধিসম্মত হয়নি। সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের গ্রেপ্তারের ক্ষেত্রে যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদন নিতে হয়। কিন্তু এ ক্ষেত্রে তা করা হয়নি। রবিবার বিষয়টি নিয়ে পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) এবং আইন মন্ত্রণালয়ে কথা বলেছেন জ্বাালানি বিভাগের সিনিয়র সচিব।

গত শনিবার দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে সিআইডির ডিআইজি মাইনুল হাসান নারায়ণগঞ্জের ঘটনায় আটজনকে গ্রেপ্তারের কথা জানান। কর্তব্যে অবহেলার অভিযোগে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করেছে তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষ। তারা হলেন- তিতাসের ফতুল্লা অঞ্চলের ব্যবস্থাপক প্রকৌশলী মো. সিরাজুল ইসলাম, উপব্যবস্থাপক মাহমুদুর রহমান রাব্বি, সহকারী প্রকৌশলী এসএম হাসান শাহরিয়ার, সহকারী প্রকৌশলী মানিক মিয়া, সিনিয়র সুপারভাইজার মো. মুনিবুর রহমান চৌধুরী, সিনিয়র উন্নয়নকারী মো. আইউব আলী, হেলপার মো. হানিফ মিয়া, কর্মচারী মো. ইসমাইল প্রধান। তারা সবাই রিমান্ডে রয়েছেন।

তিতাসের চার প্রকৌশলীকে গ্রেপ্তারের তীব্র নিন্দা ও কঠোর প্রতিবাদ জানিয়ে আইইবির বিবৃতিতে এসব প্রকৌশলীকে দ্রুত সময়ের মধ্যে নিঃশর্ত মুক্তির দাবি জানানো হয়।

আইইবি সভাপতি নূরুল হুদা বলেন, কেউ দায়ী হলে তার শাস্তি হতে পারে; কিন্তু কেউ দোষ করেছে কিনা তা না জেনেই শাস্তির আয়োজন করা যাবে না। বিষয়টি সারাদেশের প্রকৌশলীদের জন্য অসম্মানের। তিনি বলেন, আমরা তিতাসের প্রকৌশলীদের আন্দোলন করার অনুমতি দিয়েছি। বলেছি তোমরা এ বিষয়ে আন্দোলন কর।

আইইবির কেন্দ্রীয় কাউন্সিলের পক্ষে সাধারণ সম্পাদক ইঞ্জি. মো. শাহাদাৎ (শীবলু) স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে বলা হয়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুনির্দিষ্ট দিকনির্দেশনায় করোনা মহামারীকালের দুর্যোগ মোকাবিলায় সারাদেশে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের পাশাপাশি প্রকৌশলীরাও সম্মুখযোদ্ধা হিসেবে সুনামের সঙ্গে কার্য সম্পাদক করছেন। আর এই মহামারী করোনা ভাইরাসের লকডাউনকালে থেকে বিদ্যুৎ, জ্বালানি সেক্টরসহ প্রতিটি সেক্টরে দেশের প্রকৌশলীরা নিরলসভাবে পরিশ্রম করে দুর্যোগ মোকাবিলায় বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করে যাচ্ছেন। এই দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে আমাদের অনেক প্রকৌশলী মৃত্যুবরণও করেছেন। আবার অনেক প্রকৌশলী অসুস্থ হয়ে চিকিৎসাধীনও রয়েছেন।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, বর্তমান সরকারের ঘোষিত ভিশন-২০২১, ভিশন-২০৪১ এবং ডেল্টাপ্ল্যান-২১০০ বাস্তবায়নে সম্মুখযোদ্ধা হিসেবে প্রকৌশলীরা দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করছেন এবং ভবিষ্যতেও সে ধারা অব্যাহত থাকবে। কিন্তু আমরা অত্যন্ত পরিতাপের সঙ্গে লক্ষ্য করছি যে, দেশে সুনামের সঙ্গে কর্মরত প্রকৌশলীরা বিভিন্নভাবে শারীরিক নির্যাতন, মানসিক অত্যাচার, গ্রেপ্তার, রিমান্ড- এমনকি হত্যাকা-ের স্বীকারও হচ্ছেন।

তিতাসের চার প্রকৌশলীর সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ব্যতীত, ফৌজদারি আসামি না হওয়া সত্ত্বেও এবং যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদন ব্যতিরেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদের হাতকড়া পরিয়ে গ্রেপ্তার করে এবং দুদিনের রিমান্ডও মঞ্জুর করা হয়, যা সারাদেশের প্রকৌশলী সমাজে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে। এ ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানানো হয় বিবৃতিতে। একই সঙ্গে এসব প্রকৌশলীকে দ্রুত সময়ের মধ্যে নিঃশর্ত মুক্তি দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়।

এদিকে তিতাসে একাধিক কর্মকর্তা ও সিবিএর একাধিক নেতা আমাদের সময়কে অভিযোগ করে বলেন, কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং প্রকৌশলীদের একটি সাধারণ আন্দোলনকে একজন মহাব্যবস্থাপক (জিএম) ভিন্ন খাতে নিয়ে যাওয়ার প্রচেষ্টা চালিয়েছে। তিনি বর্তমান এমডির বিরুদ্ধে সবাইকে ব্যাপক আন্দোলনে যেতে নানাভাবে উৎসাহিত করেছেন। গতকাল শনিবার থেকে অনেকের সঙ্গে যোগাযোগ করে সবাইকে তিতাসের প্রধান কার্যালয়ে ডেকে নিয়ে এসেছেন।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877